দিয়াবাড়িতে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মেট্রোরেলের পথটির নাম দেওয়া হয়েছে এমআরটি লাইন-৬। ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে ১৬টি স্টেশন হবে। স্টেশনের স্থানগুলো হচ্ছে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রীরা মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন। আপাতত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। আগামী ২৬ মার্চ থেকে মেট্রোরেল সব স্টেশনে থামবে। তবে শুরুতে মেট্রোরেল রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে। মাঝখানে কোনো স্টেশনে থামবে না।মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে যাতায়াত করতে পারবেন। পঙ্গুদের জন্য ছাড় আছে।
মেট্রোরেলে যাতায়াতে যাত্রীদের জন্য দুই ধরনের টিকেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে; একটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহারের এমআরটি পাস, অন্যটি দিয়ে চড়া যাবে একবার।
শুরুতে কেবল মেট্রোরেল স্টেশনের কাউন্টার থেকে নির্দিষ্ট জামানত দিলে মিলবে এমআরটি পাস।
আর একবারের যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) জন্য টিকেট মিলবে স্টেশনে থাকা কাউন্টার এবং পাশের স্বয়ংক্রিয় ‘টিকেট মেশিন’ থেকে।
যাত্রা শেষে নির্ধারিত মেশিনে টিকেট কার্ডটি ফেরত দিলে তবেই স্টেশন থেকে বের হতে পারবেন যাত্রীরা।
এমআরটি পাস সংগ্রহের পর নিয়মিত যাতায়াতের জন্য কাউন্টারের পাশাপাশি ‘টিকেট মেশিন’, মোবাইল ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও টপ-আপ করা যাবে।
এমআরটি পাস থেকে ‘দূরত্ব অনুযায়ী’ নির্ধারিত ভাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হবে। যাত্রী যে কোনো সময় এমআরটি পাস ফেরত দিয়ে জামানতের অর্থ ও অব্যবহৃত টাকা ফেরত নিতে পারবেন।
পাসটি হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেলে ‘রেজিস্টার্ড কার্ডের বাহক’ নতুন এমআরটি পাস সংগ্রহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অব্যবহৃত অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন এমআরটি পাসে স্থানান্তরিত হবে।
আর টিকেট অফিস মেশিন বা টিওএম অপারেটরকে অবহিত করে হারানো পাসটির অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করা যাবে।
আপনি যদি একবার ট্রেনে চেপে যেতে চান, সেক্ষেত্রে স্টেশনের দোতলায় থাকা মেশিনে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে নিজেই টিকেট কাটতে পারবেন।এ মেশিনের টাচ স্ক্রিন প্যানেল ব্যবহার করা যাবে স্মার্ট ফোনের মতই।
শুরুতে ভাষা নির্বাচন করে মেশিনের বাঁ পাশের উপর দিকে থাকা ‘একক যাত্রা টিকেট’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। তখন আপনি যে স্টেশনে অবস্থান করছেন, সেটি সবুজ রঙে স্ক্রিনে দেখাবে।
এরপর আপনাকে গন্তব্যের স্টেশনের নাম নির্বাচন করতে হবে। তখন স্ক্রিনের ডান পাশে ভেসে উঠবে ভাড়ার পরিমাণ।
এরপর আপনাকে স্ক্রিনের নিচের দিকের অপশন থেকে টিকেটের সংখ্যা নির্বাচন করতে হবে। একজন যাত্রী একবারে সর্বোচ্চ পাঁচটি টিকেট কিনতে পারবেন।
টিকেটের সংখ্যা নির্দিষ্ট হওয়ার পর ‘ওকে’ বোতাম চাপতে হবে। এরপর মেশিনের নির্দিষ্ট জায়গায় টাকা প্রবেশ করানোর নির্দেশনা আসবে স্ক্রিনে।
নির্ধারিত জায়গায় টাকা প্রবেশ করালে কত টাকা দিলেন সেই তথ্য উঠতে থাকবে স্ক্রিনে।
নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়ার টাকা যদি আপনি প্রবেশ করান, তাহলে স্ক্রিনের নিচের বাঁ দিকের নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বেরিয়ে আসবে একক যাত্রার টিকেট। আর আপনি যদি কিছু টাকা ফেরত পান, সেটাও বেরিয়ে আসবে নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে।
টিকেট কাটার সময় স্ক্রিনে দেখানো হবে, আপনার নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়ার জন্য আপনি কত টাকা পর্যন্ত ব্যাংক নোট মেশিনে প্রবেশ করাতে পারবেন। কম ভাড়ার জন্য একেবারে বড় নোট প্রবেশ করানো যাবে না।
হাতে ভাংতি না থাকায় বা বড় নোটের কারণে টিকেট কাটতে না পারলে ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ নেই; চলে যান টিকেট কাউন্টারে।
বাংলাদেশে চালু সব ব্যাংক নোটই গ্রহণ করবে টিকেট বিক্রয় মেশিন। তবে বেশি পুরনো ও ছেঁড়া নোট মেশিন নেবে না।
এমআরটি পাসের জন্য শুরুতে মোট ৪০০ টাকা জমা করতে হবে। এর মধ্যে ২০০ টাকা জামানত (ফেরতযোগ্য) এবং ২০০ টাকা ভাড়া। পরে ১০০ টাকা বা তার গুণিতকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত টপ আপ করা যাবে ওই পাসে।
আপাতত শুধু স্বয়ংক্রিয় টিকেট বিক্রয় মেশিন কিংবা স্টেশন কাউন্টারের মাধ্যমে এমআরটি পাস টপ আপ করা যাবে।
স্টেশনের ভেতরে
সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে, এমআরটি পাস (দীর্ঘমেয়াদী টিকেট) থাকলেও
স্টেশনের দোতলায় প্রবেশ ও বহির্গমন গেট টপকানোর চেষ্টা করা যাবে না
মেট্রোরেল স্টেশনের লিফটে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে
চলন্ত সিঁড়িতে বাঁ দিক ঘেঁষে দাঁড়াতে হবে
গন্তব্যস্থান সম্পর্কে ধারণা পেতে মেট্রোরেল ম্যাপ দেখতে হবে
দৃষ্টিহীনদের যাতায়াতের জন্য হলুদ রঙের ট্যাকটাইল পথ ছেড়ে দাঁড়াতে হবে
স্টেশন এলাকায় ধূমপান করা যাবে না
পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে
প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোরের ওপর দিয়ে মাথা বাড়িয়ে মেট্রোরেল দেখার চেষ্টা করা যাবে না
বিনা টিকেটে মেট্রো রেলে ভ্রমণ করা যাবে না। তা করলে বা ভাড়া এড়ানোর জন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করলে নির্ধারিত ভাড়ার ১০ গুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে।
ট্রেনে চড়ার সময়
আগে নামতে দিন, পরে উঠুন
প্ল্যাটফর্ম ও মেট্রোরেল কোচের মাঝের ফাঁক থেকে সতর্ক থাকতে হবে
নিরাপত্তার স্বার্থে প্ল্যাটফর্মে হলুদ দাগের বাইরে দাঁড়াতে হবে
ওঠা-নামার সময় হুড়োহুড়ি বা ধাক্কাধাক্কি করা যাবে না
মেট্রোরেলে ওঠা-নামার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না
মেট্রোরেলের দরজায় কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না
বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত স্থান ছেড়ে দিতে হবে
কোচের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ানো যাবে না
মোবাইল ফোনের স্পিকার অন করে রাখা যাবে না
নিচু স্বরে কথা বলতে হবে
একাধিক সিট দখল করে বসা যাবে না
সহযাত্রীদের অস্বস্তি বা অসুবিধা তৈরি করা যাবে না
ড্রাইভিং ক্যাবের দরজা খোলা যাবে না
মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখতে হবে
দুই কোচের মাঝখানের চলাচলের পথে দাঁড়ানো যাবে না
নিরাপত্তা কর্মীদেরকে দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করতে হবে
এমআরটি পাস সঙ্গে রাখতে হবে
মেট্রোরেলে পানাহার করা যাবে না
ট্রেনের ভেতরের নির্দেশিকা চিহ্ন ও ডিসপ্লে দেখতে হবে। যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকবে সেখানে
ঘোষণা শুনতে হবে
নির্ধারিত স্থান ব্যতীত থুথু বা পানের পিক ফেলা যাবে না
কোনো ধরনের পোষা প্রাণী বহন করা যাবে না।
মেট্রোরেল এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন ইত্যাদি নিষিদ্ধ।