পদ্মা সেতু কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়। যেকোনো অবকাঠামোর মূল লক্ষ্য থাকে দেশ কীভাবে এ থেকে উপকৃত হবে। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগে বড় একটা ব্যবধান ছিল। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এটি পূরণ হচ্ছে। বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা অঞ্চল অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ একটি জনপদ। এই জনপদের সঙ্গে যখন রাজধানীর যোগাযোগ শুরু হয়ে যাবে, তখন এর সুফল সারা দেশের মানুষই পাবে।
পটুয়াখালী অঞ্চলের কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের কথাই বলা যাক। পর্যটনে এখনো সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারছে না এটি। শুধু যোগযোগের সমস্যার কারণে। বরিশাল থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় যেতে অনেকগুলো নদীতে ফেরি পার হতে হতো। এখন সেসব জায়গায় সেতু হয়ে গেছে। বাকি ছিল কেবল পদ্মা সেতু। এটিও হয়ে গেল। সেখানকার মানুষের ভাষায়, পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে ৩-৪ ঘণ্টায় কুয়াকাটায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। অর্থাৎ কক্সবাজার থেকেও কম সময়ে কুয়াকাটায় যাওয়া যাবে। তার মানে ওই অঞ্চলের পর্যটন কতটা উন্নত হবে, কল্পনা করলেই বোঝা যায়।
আরেকটি দিক হলো কৃষিখাত। একসময় বলা হতো, ধান-নদী-খাল, এই তিনে বরিশাল। ফরিদপুর, মাগুরা, যশোর- এই অঞ্চল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখে। এই অবদান আরও জোরালো হবে পদ্মা সেতুর কল্যাণে। ফলে জিডিপিতে সরাসরি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এটি পদ্মা সেতুর যুগান্তকারী ঘটনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও স্পষ্ট বলেছেন, পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব কেবল দক্ষিণাঞ্চলে হওয়া উচিত না। সারা দেশেই যেন এই উৎসব হয়। কারণ এটি সারা দেশের মানুষের জন্য বড় প্রাপ্তি।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। মূল সেতুর কাজ করেছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড।মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর অ্যাপ্রোচ সড়ক ১২ দশমিক ১১৭ কিলোমিটার।ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৪৮ কিলোমিটার (সড়ক) এবং ৫৩২ মিটার (রেল)।পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য মোট খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।এর জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে ১ হাজার ৪৭১ হেক্টর। এর পাশাপাশি মাওয়া প্রান্তে ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার ও জাজিরা প্রান্তে ১২ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদী শাসন করতে হয়েছে।
সেতুর সহনশীলতা:
পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় করে।
যান চলাচল:
পদ্মা সেতু দিয়ে ২০২২ সালে প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন চলাচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০৫০ সাল যা ৬৭ হাজার হতে পারে।
পদ্মা সেতুর টোল:
পদ্মা সেতুতে চলাচল করতে মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার বা জিপে ৭৫০ টাকা, পিকআপ ভ্যানে ১ হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে ১ হাজার ৩০০ টাকা, ছোট বাসে (৩১ আসন বা এর কম) ১ হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে (৩২ আসন বা এর বেশি) ২ হাজার টাকা, বড় বাসে (৩ এক্সেল) ২ হাজার ৪০০ টাকা, ছোট ট্রাকে (৫ টন পর্যন্ত) ১ হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (৫ টনের বেশি থেকে ৮ টন) ২ হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ টনের বেশি থেকে ১১ টন পর্যন্ত) ২ হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) ৫ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (৪ এক্সেল পর্যন্ত) ৬ হাজার টাকা এবং ট্রেইলার (৪ এক্সেলের বেশি) ৬ হাজারের সঙ্গে প্রতি এক্সেলে ১ হাজার ৫০০ টাকা যোগ করে টোল দিতে হবে।